আপনার প্রিয় পোষা বিড়ালটি কি আপনার সোফায় গড়াগড়ি দিচ্ছে? নাকি জানালার পাশে বসে পাখি দেখছে? বিড়াল আমাদের জীবনে এমনভাবে মিশে গেছে যে এদের ছাড়া ঘর যেন অসম্পূর্ণ। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই লোমশ বন্ধুদের সম্পর্কে এমন অনেক বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য রয়েছে যা আপনাকে অবাক করে দেবে?
বাংলাদেশে বিড়াল পালনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সব জায়গায় বিড়াল প্রেমীদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমরা কি সত্যিই আমাদের বিড়ালদের ভালোভাবে চিনি? আজকের এই লেখায় আমরা জানবো বিড়াল সম্পর্কে এমন সব তথ্য যা হয়তো আপনি আগে কখনো শোনেননি। এই বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য গুলো জানলে আপনি আপনার পোষা প্রাণীটিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং তার যত্ন নিতে পারবেন।
বিড়ালের শারীরিক গঠনের চমৎকার তথ্য
বিড়ালের শরীর প্রকৃতির এক অসাধারণ সৃষ্টি। একটি বিড়ালের শরীরে প্রায় ২৩০টি হাড় থাকে, যা মানুষের হাড়ের সংখ্যা (২০৬) থেকেও বেশি। এই অতিরিক্ত হাড়গুলো তাদের মেরুদণ্ডে থাকে, যার ফলে বিড়াল এত নমনীয় এবং তারা সহজেই সরু জায়গা দিয়ে যেতে পারে।
আরও একটি আশ্চর্যজনক বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য হলো যে বিড়ালের কলারবোন (collarbone) খুবই ছোট এবং প্রায় ভাসমান অবস্থায় থাকে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে বিড়াল তার মাথা যেখানে ঢুকাতে পারে, পুরো শরীর সেখানে ঢুকিয়ে ফেলতে পারে। এজন্যই দেখবেন আপনার বিড়াল ছোট্ট একটি বাক্সেও সহজে ঢুকে যায়।
বিড়ালের থাবায় থাকা প্যাড শুধুমাত্র হাঁটার জন্য নয়, এগুলো একই সঙ্গে ঘামের গ্রন্থি হিসেবেও কাজ করে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়ছেন! বিড়াল তাদের পায়ের তলা থেকে ঘাম বের করে। যখন আপনার বিড়াল উত্তেজিত বা ভীত থাকে, তখন তার থাবা ভেজা অনুভব করতে পারেন।
বিড়ালের ঘুমের অভ্যাসের রহস্য
বিড়াল সম্পর্কে সবচেয়ে পরিচিত কিন্তু চমকপ্রদ বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য হলো তাদের ঘুমের অভ্যাস। একটি বিড়াল দিনে গড়ে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমায়। কিছু বিড়াল তো ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে! এর মানে হলো একটি বিড়াল তার জীবনের প্রায় ৭০% সময় ঘুমিয়ে কাটায়।
কিন্তু কেন বিড়াল এত বেশি ঘুমায়? এর কারণ হলো বিড়াল স্বভাবগতভাবে শিকারি প্রাণী। বন্য বিড়ালরা শিকারের জন্য প্রচুর শক্তি ব্যয় করে, তাই তাদের শরীর সেই শক্তি সংরক্ষণের জন্য বেশি ঘুমানোর প্রয়োজন অনুভব করে। যদিও আপনার ঘরের বিড়ালকে শিকার করতে হয় না, তবুও এই প্রবৃত্তি তাদের মধ্যে রয়ে গেছে।
আরও মজার ব্যাপার হলো, বিড়ালের ঘুম দুই ধরনের – হালকা ঘুম এবং গভীর ঘুম। বেশিরভাগ সময় বিড়াল হালকা ঘুমে থাকে, যেখানে তারা যেকোনো মুহূর্তে জেগে উঠতে পারে। এজন্যই আপনার বিড়াল ঘুমের মধ্যেও কান নাড়াতে পারে বা হঠাৎ লাফিয়ে উঠতে পারে।
বিড়ালের যোগাযোগ ক্ষমতা
বিড়াল প্রায় ১০০টিরও বেশি ধরনের শব্দ করতে পারে, যেখানে কুকুর মাত্র ১০টির মতো শব্দ করতে পারে। এটি একটি অবিশ্বাস্য বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য। মিউ, পার, হিস, চিৎকার – প্রতিটি শব্দের আলাদা অর্থ রয়েছে।
আরও অবাক করা তথ্য হলো, পূর্ণবয়স্ক বিড়াল সাধারণত অন্য বিড়ালের সাথে ‘মিউ’ করে না। তারা শুধুমাত্র মানুষের সাথে যোগাযোগের জন্য এই শব্দ ব্যবহার করে। মানে আপনার বিড়াল বিশেষভাবে আপনার সাথে কথা বলার জন্য এই শব্দ ব্যবহার করছে!
বিড়ালের লেজও একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম। লেজ খাড়া থাকলে বিড়াল খুশি, আর লেজ ঝাড়ু হয়ে ফুলে গেলে বিড়াল ভয় পেয়েছে বা রেগে আছে। লেজ নাড়ানোর গতিও গুরুত্বপূর্ণ – ধীর নাড়ানো মানে চিন্তামগ্ন, আর দ্রুত নাড়ানো মানে বিরক্ত বা উত্তেজিত।
বিড়ালের দৃষ্টিশক্তি এবং ইন্দ্রিয়ের বিশেষত্ব
অনেকে মনে করেন বিড়াল অন্ধকারে দেখতে পায়। আসলে এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। তবে বিড়ালের রাতের দৃষ্টিশক্তি মানুষের চেয়ে প্রায় ৬ থেকে ৮ গুণ ভালো। এই বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য জেনে রাখা জরুরি যদি আপনি বুঝতে চান কেন আপনার বিড়াল রাতে এত সক্রিয় থাকে।
বিড়ালের চোখে একটি বিশেষ প্রতিফলক স্তর থাকে যাকে বলা হয় ‘tapetum lucidum’। এই স্তর আলোকে প্রতিফলিত করে এবং রেটিনায় দুবার পৌঁছতে সাহায্য করে। এজন্যই অন্ধকারে বিড়ালের চোখ জ্বলজ্বল করে।
বিড়াল লাল রঙ ভালোভাবে দেখতে পায় না। তাদের দৃষ্টি মূলত নীল এবং হলুদ রঙের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। তাই আপনার লাল খেলনাটি আপনার বিড়ালের কাছে হয়তো ধূসর রঙের মনে হচ্ছে!
বিড়ালের ঘ্রাণশক্তি মানুষের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি শক্তিশালী। তাদের নাকে প্রায় ২০ কোটি ঘ্রাণ রিসেপ্টর রয়েছে, যেখানে মানুষের মাত্র ৫০ লাখ। এজন্যই আপনার বিড়াল খাবার খাওয়ার আগে ভালোভাবে শুঁকে নেয়।
বিড়ালের বুদ্ধিমত্তা এবং স্মৃতিশক্তি
বিড়ালের স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে, যা কুকুরের (৫ মিনিট) তুলনায় অনেক বেশি। এই বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য ব্যাখ্যা করে কেন আপনার বিড়াল মনে রাখে যে আপনি তাকে সকালে দেরিতে খাবার দিয়েছিলেন!
বিড়ালের মস্তিষ্ক মানুষের মস্তিষ্কের সাথে ৯০% সাদৃশ্যপূর্ণ। তাদের মস্তিষ্কে প্রায় ৩০ কোটি নিউরন রয়েছে, যেখানে কুকুরের রয়েছে প্রায় ১৬ কোটি। এই তথ্য থেকে বোঝা যায় বিড়াল আসলে কতটা বুদ্ধিমান প্রাণী।
বিড়াল সমস্যা সমাধানে খুবই দক্ষ। তারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিখতে পারে এবং কৌশল অবলম্বন করতে পারে। আপনার বিড়াল যদি দরজার হাতল খুলতে শিখে যায়, তাহলে অবাক হবেন না – এটি তাদের বুদ্ধিমত্তারই পরিচয়।
বিড়ালের শারীরিক ক্ষমতা
একটি বিড়াল তার শরীরের দৈর্ঘ্যের ৬ গুণ পর্যন্ত লাফ দিতে পারে। একটি গড় বিড়াল যদি ৩০ সেমি লম্বা হয়, তাহলে সে প্রায় ১৮০ সেমি পর্যন্ত লাফাতে পারে! এটি আরেকটি চমৎকার বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য যা তাদের ক্রীড়াবিদ সত্তা প্রকাশ করে।
বিড়াল ঘণ্টায় প্রায় ৩০ মাইল (৪৮ কিমি) বেগে দৌড়াতে পারে। এই গতি উসাইন বোল্টের সর্বোচ্চ গতির প্রায় সমান! তবে বিড়াল দীর্ঘ দূরত্বের দৌড়বিদ নয়, তারা শুধু স্বল্প দূরত্বে এই গতি বজায় রাখতে পারে।
বিড়ালের একটি বিশেষ ক্ষমতা হলো উঁচু থেকে পড়ার সময় নিজেকে সামলে নেওয়া। এটিকে বলে ‘righting reflex’। বিড়াল যখন পড়ে, তখন তার ভারসাম্য অঙ্গ এবং নমনীয় মেরুদণ্ড ব্যবহার করে মাঝ বাতাসে নিজেকে ঘুরিয়ে পায়ে দাঁড়াতে পারে। এই ক্ষমতা বিড়ালের বাচ্চাদের ৩-৪ সপ্তাহ বয়স থেকেই বিকশিত হতে শুরু করে।
বিড়ালের সামাজিক আচরণ
বিড়াল যখন আপনার পায়ে বা হাতে মাথা ঘষে, তখন আসলে সে আপনাকে তার নিজের বলে চিহ্নিত করছে। বিড়ালের মুখ, থাবা এবং লেজে ঘ্রাণ গ্রন্থি থাকে যা ফেরোমোন নিঃসরণ করে। এই বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য জানলে আপনি বুঝবেন আপনার বিড়াল কতটা ভালোবাসে আপনাকে।
বিড়ালের পার পার (purring) শব্দ শুধু খুশি থাকার লক্ষণ নয়। বিড়াল অসুস্থ বা ব্যথা অনুভব করলেও পার করতে পারে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে পার করার কম্পন (২৫-১৫০ Hz) হাড় এবং টিস্যু নিরাময়ে সাহায্য করে। এজন্যই বিড়াল আঘাত পেলে নিজেকে সুস্থ করতে পার করে।
বিড়াল তাদের মালিককে উপহার দিতে ভালোবাসে – মৃত ইঁদুর, পাখি বা পোকামাকড়! এটি আসলে তাদের ভালোবাসা প্রকাশের একটি উপায়। বন্য বিড়াল তাদের বাচ্চাদের শিকার করা শেখায় এই পদ্ধতিতে। আপনার বিড়াল মনে করে আপনি তার পরিবার, তাই সে আপনাকে ‘শিকার’ করা শেখাতে চায়!
বাংলাদেশে বিড়াল পালনের বিশেষ পরামর্শ
বাংলাদেশের আবহাওয়া বিড়াল পালনের জন্য বেশ উপযুক্ত। তবে গ্রীষ্মকালে বিড়ালের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এই বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য গুলো জানার পাশাপাশি আপনার দেশীয় পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা, চট্টগ্রাম বা অন্যান্য শহরে বিড়াল পালনের সময় নিয়মিত ভেটেরিনারি চেকআপ জরুরি। বাংলাদেশে এখন অনেক ভালো পেট ক্লিনিক এবং ভেটেরিনারি সেবা পাওয়া যায়। আপনার বিড়ালের টিকা, কৃমিনাশক এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে ভুলবেন না।
বর্ষাকালে বিড়ালের লোম শুকনো রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ভেজা লোম থেকে ত্বকের সমস্যা হতে পারে। আবার শীতকালে হালকা গরম পানিতে গোসল করানো ভালো।
বিড়ালের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি
বিড়াল সম্পূর্ণ মাংসাশী প্রাণী। তাদের খাবারে অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকতে হবে। বিড়ালের শরীর ট্যাউরিন নামক একটি এসেনশিয়াল অ্যামিনো এসিড তৈরি করতে পারে না, যা তাদের হৃদয় এবং দৃষ্টিশক্তির জন্য অপরিহার্য। এই বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য জানা প্রতিটি বিড়াল মালিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিড়াল আসলে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট। অর্থাৎ তারা দুধ ঠিকমতো হজম করতে পারে না। তাই আপনার বিড়ালকে নিয়মিত দুধ খাওয়ানো উচিত নয়, যদিও অনেক বিড়াল দুধ পছন্দ করে।
পানি পান খুবই জরুরি। বিড়াল স্বভাবতই কম পানি পান করে, কারণ তাদের পূর্বপুরুষরা মরুভূমিতে বাস করতো। তাই আপনার বিড়ালকে পানি পান করতে উৎসাহিত করুন। অনেক বিড়াল চলমান পানি পছন্দ করে, তাই পেট ফাউন্টেন ব্যবহার করতে পারেন।
বিড়ালের আয়ু এবং বয়স নির্ণয়
একটি ঘরের বিড়াল গড়ে ১২ থেকে ১৮ বছর বাঁচে, কিন্তু কিছু বিড়াল ২০ বছরের বেশিও বাঁচতে পারে। রেকর্ডে থাকা সবচেয়ে বয়স্ক বিড়াল ছিল ‘Creme Puff’ নামের একটি বিড়াল, যে ৩৮ বছর বেঁচে ছিল!
বিড়ালের বয়স মানুষের বয়সের সাথে তুলনা করা হয়, তবে এটি সরলরেখায় হয় না। একটি ১ বছরের বিড়াল প্রায় ১৫ বছর বয়সী মানুষের সমান। ২ বছরে তা হয় ২৪ বছরের সমান। এরপর প্রতি বছরে প্রায় ৪ মানব বছর যোগ হয়।
প্রাচীন ইতিহাসে বিড়াল
বিড়াল প্রায় ৯,৫০০ বছর ধরে মানুষের সাথে রয়েছে। প্রাচীন মিশরে বিড়ালকে পবিত্র প্রাণী হিসেবে পূজা করা হতো। বিড়াল মারা গেলে পরিবারের সবাই শোক পালন করতো এবং ভ্রু কামিয়ে ফেলতো! এই বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য প্রমাণ করে বিড়াল সবসময়ই মানুষের প্রিয় ছিল।
মিশরীয়দের একজন দেবী ছিলেন ‘বাস্তেত’ যার মাথা ছিল বিড়ালের। প্রাচীন মিশরে বিড়াল হত্যা করলে মৃত্যুদণ্ড হতো। যখন কোনো বিড়াল মারা যেত, তাদের মমি করে রাখা হতো।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিড়াল এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় পোষা প্রাণীদের একটি। তাদের স্বাধীন স্বভাব, পরিচ্ছন্নতা এবং কম রক্ষণাবেক্ষণের কারণে শহুরে জীবনে বিড়াল পালন খুবই সুবিধাজনক।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
১. বিড়াল কেন এত বেশি ঘুমায়?
বিড়াল স্বভাবগতভাবে শিকারি প্রাণী এবং তাদের শরীর শক্তি সংরক্ষণের জন্য বেশি ঘুমানোর প্রয়োজন অনুভব করে। একটি বিড়াল দিনে গড়ে ১২-১৬ ঘণ্টা ঘুমায়, যা তাদের জৈবিক প্রবৃত্তির অংশ। এমনকি ঘরে পালিত বিড়ালেও এই প্রবৃত্তি রয়ে গেছে। বেশিরভাগ সময় তারা হালকা ঘুমে থাকে এবং যেকোনো মুহূর্তে সক্রিয় হতে পারে।
২. বিড়ালের পার পার শব্দের মানে কী?
বিড়ালের পার পার শব্দ শুধুমাত্র খুশি থাকার লক্ষণ নয়। বিড়াল যখন সন্তুষ্ট, নিরাপদ এবং আরামদায়ক অবস্থায় থাকে তখন পার করে। তবে অসুস্থ, ব্যথা বা উদ্বিগ্ন থাকলেও বিড়াল পার করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে পার করার কম্পন (২৫-১৫০ Hz) হাড় এবং টিস্যু নিরাময়ে সাহায্য করে, তাই বিড়াল নিজেকে সুস্থ করতেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করে।
৩. বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বিড়াল পালনে কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
বাংলাদেশের গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় বিড়ালের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে বিড়ালকে ঠাণ্ডা ও ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করুন। বর্ষাকালে লোম শুকনো রাখুন যাতে ত্বকের সংক্রমণ না হয়। নিয়মিত ভেটেরিনারি চেকআপ করান এবং প্রয়োজনীয় টিকা ও কৃমিনাশক দিন। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এবং মশার কামড় থেকে রক্ষা করুন।
৪. বিড়াল কি দুধ খেতে পারে?
অনেকের ধারণা বিড়াল দুধ পছন্দ করে এবং এটি তাদের জন্য ভালো। কিন্তু আসলে বেশিরভাগ পূর্ণবয়স্ক বিড়াল ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট হয়, অর্থাৎ তারা দুধের ল্যাকটোজ ঠিকমতো হজম করতে পারে না। এতে পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া হতে পারে। তাই নিয়মিত দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। বিড়ালের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ল্যাকটোজ-মুক্ত দুধ পাওয়া যায়, সেটি দিতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো হলো পরিষ্কার পানি ও সুষম বিড়ালের খাবার দেওয়া।
৫. বিড়াল কেন মৃত পোকামাকড় বা ইঁদুর এনে দেয়?
এটি আসলে বিড়ালের ভালোবাসা প্রকাশের একটি উপায়! বন্য বিড়াল তাদের বাচ্চাদের শিকার ধরা শেখানোর জন্য মৃত বা আধমরা শিকার নিয়ে আসে। আপনার পোষা বিড়াল আপনাকে তার পরিবারের অংশ মনে করে এবং মনে করে আপনি একজন দুর্বল শিকারি (কারণ আপনি নিজে শিকার করেন না!)। তাই সে আপনাকে ‘শিকার’ করা শেখাতে এবং খাবার দিতে চায়। এটি বিরক্তিকর হলেও এটি আসলে আপনার প্রতি তার ভালোবাসার প্রমাণ। এক্ষেত্রে বিড়ালকে শাস্তি দেবেন না, বরং ধন্যবাদ জানিয়ে উপহারটি সরিয়ে ফেলুন।
উপসংহার
বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য জানা মানে শুধু তথ্য জানা নয়, বরং আপনার প্রিয় পোষা প্রাণীটিকে আরও ভালোভাবে বোঝা এবং তার যত্ন নেওয়া। বিড়ালের অসাধারণ শারীরিক ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা, এবং অনন্য আচরণ তাদের করে তোলে বিশেষ।
বাংলাদেশে বিড়াল পালনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং এটি খুবই আনন্দের বিষয়। তবে মনে রাখবেন, একটি বিড়াল পালন মানে দায়িত্ব নেওয়া। তাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং মানসিক সুস্থতার প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য গুলো জানার পর আপনি আপনার বিড়ালের প্রতিটি আচরণ আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। যখন আপনার বিড়াল আপনার পায়ে মাথা ঘষবে, আপনি জানবেন সে আপনাকে তার নিজের বলে চিহ্নিত করছে। যখন সে পার করবে, বুঝবেন সে হয়তো আরামে আছে বা নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
মনে রাখবেন, প্রতিটি বিড়ালই অনন্য। তাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব এবং অভ্যাস রয়েছে। সময় দিন, ভালোবাসা দিন এবং ধৈর্য রাখুন। আপনার বিড়াল আপনার জীবনে আনবে অসীম আনন্দ এবং সাহচর্য।
বিড়াল শুধু একটি পোষা প্রাণী নয়, তারা পরিবারের সদস্য। এই বিড়াল সম্পর্কে অজানা তথ্য জানার মাধ্যমে আপনি আপনার লোমশ বন্ধুর সাথে আরও গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন। তাই আপনার বিড়ালকে পর্যবেক্ষণ করুন, তাদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন এবং তাদের প্রয়োজন পূরণ করুন।
