শীতের হিমেল হাওয়া যখন জানালা দিয়ে ঢুকতে শুরু করে, তখন শুধু আমরা নই, আমাদের আদরের বিড়ালেরাও ঠাণ্ডার প্রভাব অনুভব করে। বাংলাদেশে শীতকাল মানেই কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল আর কাঁপুনি দেওয়া রাত। আর এই সময়টাতে শীতকালে বিড়ালের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিড়ালরা ঠাণ্ডা আবহাওয়া মোটেও পছন্দ করে না এবং শীত তাদের জন্য প্রকৃতপক্ষে একটি বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে।
আপনি যদি একজন দায়িত্বশীল ক্যাট প্যারেন্ট হয়ে থাকেন, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আজ আমরা বিস্তারিত জানবো কীভাবে শীতের মৌসুমে আপনার বিড়ালকে সুস্থ, নিরাপদ এবং আরামদায়ক রাখবেন।
শীত কেন বিড়ালের জন্য বিপজ্জনক?
অনেকেই মনে করেন বিড়ালের লোমশ শরীর থাকায় তারা ঠাণ্ডায় ভালোই থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিড়ালের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা মানুষের চেয়ে বেশি (প্রায় ১০০-১০২.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। তাই শীতে তাপমাত্রা কমে গেলে তাদের শরীর দ্রুত প্রভাবিত হয়।
শীতকালে বিড়ালের প্রধান সমস্যাগুলো:
- ক্যাট ফ্লু বা সর্দি-জ্বর: শীতে বিড়ালের সবচেয়ে কমন সমস্যা
- শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ: ঠাণ্ডা লাগলে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে
- হাইপোথার্মিয়া: অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনক মাত্রায় কমে যাওয়া
- গাঁটে ব্যথা: বয়স্ক বিড়ালদের আর্থ্রাইটিস বেড়ে যায়
তাই বিড়ালের শীতকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করা শুধু আরামের বিষয় নয়, এটি তাদের বেঁচে থাকার প্রশ্ন।
শীতকালে বিড়ালের যত্ন: ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ গাইড
১. শীতের আগেই ভ্যাকসিনেশন সম্পন্ন করুন
শীতকালে বিড়ালের যত্ন শুরু হয় প্রতিরোধ থেকে। শীত শুরু হওয়ার আগেই আপনার বিড়ালকে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিয়ে নিন:
অপরিহার্য ভ্যাকসিনসমূহ:
- র্যাবিস ভ্যাকসিন: প্রতি বছর একবার দিতে হয়
- ফ্লু ভ্যাকসিন (FVRCP): ক্যাট ফ্লু, হার্পিসভাইরাস এবং ক্যালিসিভাইরাস থেকে রক্ষা করে
- লিউকেমিয়া ভ্যাকসিন: বাইরে যাওয়া বিড়ালদের জন্য
কেন এটি জরুরি? শীতে বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ভ্যাকসিন না দিলে ছোট্ট একটা ঠাণ্ডা লাগা থেকে মারাত্মক ফ্লু হতে পারে। আর ফ্লুর চিকিৎসা খরচ ভ্যাকসিনের চেয়ে ৫-১০ গুণ বেশি পড়বে। তাছাড়া, ফ্লু হলে চিকিৎসার সময় নাও পেতে পারেন এবং পরিস্থিতি জীবনঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
টিপস:
- ভ্যাকসিন দেওয়ার পর ২৪-৪৮ ঘণ্টা বিড়ালকে পর্যবেক্ষণে রাখুন
- ঢাকায় ভেটেরিনারি ক্লিনিক যেমন কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতাল বা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়
- ভ্যাকসিনের একটি রেকর্ড বুক রাখুন
২. গোসল বন্ধ রাখুন বা সীমিত করুন
শীতকালে বিড়ালকে গোসল করানো সবচেয়ে বড় ভুলগুলোর একটি। বিড়ালের শীতকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাইলে গোসল বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
শীতে গোসলের নিয়মকানুন:
- সম্ভব হলে পুরো শীতকাল গোসল বন্ধ রাখুন (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি)
- বিড়াল স্বভাবতই পরিষ্কার প্রাণী, তারা নিজেরাই নিজেদের পরিষ্কার রাখে
- একান্ত প্রয়োজন হলে ড্রাই শ্যাম্পু বা পেট ওয়াইপস ব্যবহার করুন
যদি গোসল করাতেই হয়:
- রৌদ্রজ্জ্বল দুপুরে গোসল করান (১২টা-২টার মধ্যে)
- হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন (অতিরিক্ত গরম নয়)
- গোসলের পর তাৎক্ষণিক তোয়ালে দিয়ে শুকিয়ে ফেলুন
- হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন (কম তাপমাত্রায়)
- পুরোপুরি শুকানোর আগে ঠাণ্ডা বাতাসে যেতে দেবেন না
সতর্কতা: গোসলের পর বিড়াল যদি কাঁপতে থাকে, নাক দিয়ে পানি পড়ে বা হাঁচি দেয়, তাহলে দ্রুত ভেটের সাথে যোগাযোग করুন।
৩. নিয়মিত ডিওয়ার্মিং করান
শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে ডিওয়ার্মিং একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শীতকালে বিড়ালের যত্ন এর অংশ হিসেবে এটি অবহেলা করবেন না।
কেন ডিওয়ার্মিং জরুরি?
- শীতে বিড়ালের বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায়
- কৃমির সংক্রমণ শরীরের পুষ্টি শোষণ করে নেয়
- দুর্বল বিড়াল শীতে আরও বেশি অসুস্থ হয়
ডিওয়ার্মিং সময়সূচী:
- প্রতি ৩ মাসে একবার নিয়মিত ডিওয়ার্মিং করান
- শীতের শুরুতে (অক্টোবর-নভেম্বর) একবার অবশ্যই দিন
- বাচ্চা বিড়ালদের ক্ষেত্রে ভেটের পরামর্শ মতো চলুন
জনপ্রিয় ডিওয়ার্মিং মেডিসিন:
- Drontal Plus
- Endorid Tablet
- Panacur
৪. উষ্ণ ও আরামদায়ক বিছানা তৈরি করুন
বিড়ালরা দিনে ১২-১৬ ঘণ্টা ঘুমায়। শীতে এই ঘুমের জায়গাটি যদি উষ্ণ না হয়, তাহলে তারা সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়বে।
আদর্শ শীতকালীন বিছানার বৈশিষ্ট্য:
- মাটি/ফ্লোর থেকে উঁচুতে থাকবে: ঠাণ্ডা বাতাস মাটি ঘেঁষে বয়, তাই বিছানা অন্তত ৬ ইঞ্চি উঁচুতে রাখুন
- পুরু কাপড় বা কম্বল দিয়ে সাজান: মখমল, ফ্লিস বা উলের কাপড় দারুণ কাজ করে
- একটি বদ্ধ জায়গা: Cat bed বা কার্ডবোর্ড বক্স ব্যবহার করতে পারেন
- রোদ আসে এমন স্থান: বিড়ালরা রোদ পছন্দ করে, জানালার পাশে বিছানা রাখুন
DIY বিছানা তৈরি:
- একটি পুরনো কার্ডবোর্ড বক্স নিন
- ভিতরে পুরনো কাপড়/চাদর বিছিয়ে দিন
- উপরে একটি পুরনো সোয়েটার বা কম্বল দিন
- বক্সের মুখে পর্দা লাগিয়ে দিতে পারেন
অনলাইনে কিনতে পারেন: বাংলাদেশে বিভিন্ন পেট শপে (যেমন: Petsworld BD, Pet Fair, Little Paws) সুন্দর সুন্দর ক্যাট বেড পাওয়া যায়। দাম ৮০০-৩০০০ টাকার মধ্যে।
৫. খাবারে বিশেষ মনোযোগ দিন
শীতে বিড়ালের বিপাক হার বৃদ্ধি পায় কারণ তাদের শরীরকে তাপ উৎপাদন করতে হয়। তাই শীতকালে বিড়ালের যত্ন এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সঠিক খাবার।
শীতকালীন খাদ্য পরিকল্পনা:
১. তাজা ও উষ্ণ খাবার দিন:
- প্রতিদিন তাজা খাবার রান্না করুন
- শীতে খাবার ফ্রিজে রাখার দরকার নেই (সারাদিন ঠিক থাকবে)
- ঠাণ্ডা খাবার দেবেন না, কুসুম গরম খাবার দিন
২. ক্যালোরি বাড়ান:
- শীতে বিড়ালের ১০-১৫% বেশি ক্যালোরি প্রয়োজন
- মাংসের পরিমাণ সামান্য বাড়িয়ে দিন
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দিন (মুরগি, মাছ, ডিম)
৩. পানি সরবরাহ:
- শীতে বিড়ালরা কম পানি পান করে
- কুসুম গরম পানি বাটিতে দিন
- ঝোল জাতীয় খাবার বেশি দিন
নমুনা মেনু (একটি প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালের জন্য):
সকাল:
- ৫০ গ্রাম সিদ্ধ মুরগি + ২ টেবিল চামচ ভাত + সামান্য সবজি
দুপুর:
- ১টি সিদ্ধ ডিম + মুরগির ঝোল
রাত:
- ৭০-১০০ গ্রাম মাছ/মুরগি + ভাত/সাগু
সতর্কতা: খাবার ফ্রিজে রাখা থাকলে অবশ্যই ভালো করে গরম করে ঠাণ্ডা হতে দিয়ে দিন। সরাসরি ঠাণ্ডা খাবার কখনোই দেবেন না।
৬. উষ্ণ পোশাক পরান
হ্যাঁ, আপনার বিড়ালকে জামা পরাতে পারেন! বিশেষ করে শর্টহেয়ার বিড়াল, স্ফিংক্স, বা বয়স্ক বিড়ালদের জন্য বিড়ালের শীতকালীন সুরক্ষা হিসেবে পোশাক খুবই কার্যকর।
কখন পোশাক পরাবেন:
- তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে
- রাতের বেলা বা ভোরে
- বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময়
কী ধরনের পোশাক:
- নরম ফ্লিস বা উলের সোয়েটার
- পেটের অংশ ঢাকা থাকে এমন ডিজাইন
- ঢিলেঢালা, চলাফেরায় বাধা দেয় না এমন
- ঘাড় ও পা ঢাকা থাকলে ভালো
কোথায় পাবেন:
- অনলাইন পেট শপ: ৩০০-১৫০০ টাকা
- নিজে সেলাই করিয়ে নিতে পারেন: ২০০-৫০০ টাকা
- পুরনো সোয়েটার দিয়ে DIY করতে পারেন
মনে রাখবেন: সব বিড়াল পোশাক পছন্দ করে না। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করান এবং জোর করবেন না।
৭. ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন
শীতকালে বিড়ালের যত্ন এর জন্য ঘরের পরিবেশ অনুকূল রাখা জরুরি।
আদর্শ ঘরের তাপমাত্রা:
- বিড়ালের জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রা: ১৮-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- ১২ ডিগ্রির নিচে নামলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে
কী করবেন:
- রাতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন
- ঠাণ্ডা বাতাস ঢোকার পথ বন্ধ করুন
- হিটার ব্যবহার করলে সাবধানে (বিড়াল ঝলসে যেতে পারে)
- হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন (শুষ্ক বাতাস ত্বকের জন্য ক্ষতিকর)
৮. বাইরে যাওয়া সীমিত করুন
যেসব বিড়াল নিয়মিত বাইরে যায়, শীতে তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক।
নিয়মাবলী:
- ভোর ও রাতে একেবারেই বাইরে যেতে দেবেন না
- দুপুরে সূর্যের আলো থাকা অবস্থায় ছাড়তে পারেন
- বাইরে যাওয়ার পর ভালো করে পা মুছে দিন
- বৃষ্টি বা কুয়াশায় বাইরে পাঠাবেন না
৯. ত্বক ও পশমের যত্ন নিন
শীতে বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে বিড়ালের ত্বক ও পশমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যা করবেন:
- নিয়মিত ব্রাশ করুন (দিনে ১০ মিনিট)
- অলিভ অয়েল বা কোকোনাট অয়েল মাখতে পারেন (সপ্তাহে ১ বার)
- খুশকি দেখা দিলে মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
- ত্বকে লাল দাগ বা চুলকানি হলে ভেটের কাছে যান
১০. ব্যায়াম ও খেলাধুলা চালিয়ে যান
শীতে বিড়ালরা অলস হয়ে যায় এবং কম নড়াচড়া করে। কিন্তু বিড়ালের শীতকালীন সুরক্ষা র জন্য সক্রিয় থাকা জরুরি।
কী করবেন:
- দিনে ১৫-২০ মিনিট খেলাধুলা করান
- লেজার পয়েন্টার, পালক খেলনা ব্যবহার করুন
- নতুন খেলনা দিয়ে উৎসাহিত করুন
- ক্যাট টাওয়ার বা স্ক্র্যাচিং পোস্ট রাখুন

শীতে বিড়ালের অসুস্থতার লক্ষণ
শীতকালে বিড়ালের যত্ন নেওয়ার সময় এই লক্ষণগুলো দেখলে সাথে সাথে ভেটের কাছে নিয়ে যান:
জরুরি লক্ষণসমূহ:
- ক্যাট ফ্লু: হাঁচি, নাক-চোখ দিয়ে পানি, জ্বর, খাওয়া বন্ধ
- হাইপোথার্মিয়া: অতিরিক্ত কাঁপুনি, নিস্তেজতা, ঠাণ্ডা কান-পা
- শ্বাসকষ্ট: দ্রুত শ্বাস, মুখ হাঁ করে শ্বাস নেওয়া
- ডায়রিয়া বা বমি: পানিশূন্যতার ঝুঁকি
- আচরণে পরিবর্তন: লুকিয়ে থাকা, আগ্রাসী হওয়া
সাধারণ লক্ষণ (পর্যবেক্ষণে রাখুন):
- ঘন ঘন হাই তোলা
- চোখের কোণে ময়লা জমা
- পশম রুক্ষ হয়ে যাওয়া
- স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘুমানো
শীতে বিড়ালের জন্য জরুরি সাপ্লাই তালিকা
শীতকালে বিড়ালের যত্ন এর জন্য এই জিনিসগুলো হাতের কাছে রাখুন:
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
- উষ্ণ কম্বল/বিছানা
- ক্যাট সোয়েটার (১-২টি)
- থার্মোমিটার (বিড়ালের জন্য)
- পেট ওয়াইপস
- ভ্যাসলিন (থাবার জন্য)
- হিউমিডিফায়ার (যদি সম্ভব হয়)
- জরুরি ওষুধ (ভেটের পরামর্শ মতো)
খাবারের স্টক:
- মুরগির মাংস
- মাছ (রুই, কাতলা)
- ডিম
- ভেট-অনুমোদিত মাল্টিভিটামিন
বিশেষ পরিস্থিতি: বিভিন্ন বয়সের বিড়ালের যত্ন
বাচ্চা বিড়াল (Kittens):
- অতিরিক্ত উষ্ণতা দরকার (বয়স্কদের চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি বেশি)
- ২-৩ ঘণ্টা পরপর খাবার
- মায়ের সাথে রাখলে সবচেয়ে ভালো
প্রাপ্তবয়স্ক বিড়াল:
- উপরের সব নিয়ম মেনে চলুন
- নিয়মিত ওজন মাপুন
বয়স্ক বিড়াল (7+ বছর):
- গাঁটের ব্যথার জন্য অতিরিক্ত যত্ন
- নরম বিছানা দিন
- সহজে হজম হয় এমন খাবার
- নিয়মিত ভেট চেক-আপ
অসুস্থ বা দুর্বল বিড়াল:
- ২৪ ঘণ্টা নজরদারি
- পুষ্টিকর খাবার ও সাপ্লিমেন্ট
- ভেটের ফোন নাম্বার সবসময় কাছে রাখুন
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষ টিপস
শীতকালে বিড়ালের যত্ন বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে মিলিয়ে:
ঢাকা ও আশপাশ:
- নভেম্বর থেকে সতর্ক থাকুন
- ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি যত্ন নিন
সিলেট অঞ্চল:
- বেশি ঠাণ্ডা ও আর্দ্র, ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি
- ঘর শুষ্ক রাখার চেষ্টা করুন
চট্টগ্রাম:
- তুলনামূলক কম শীত, তবে রাতে সতর্ক থাকুন
- সমুদ্রের বাতাস ঠাণ্ডা, বারান্দায় রাখবেন না
রাজশাহী-রংপুর:
- সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা এই অঞ্চলে
- রাতে অবশ্যই ঘরের ভিতরে রাখুন
- হিটার ব্যবহার করতে পারেন
শেষ কথা
শীতকালে বিড়ালের যত্ন নেওয়া মোটেও কঠিন কাজ নয়, শুধু একটু সচেতনতা ও ভালোবাসা দরকার। মনে রাখবেন, শীত বিড়ালের জন্য সত্যিকারের একটি চ্যালেঞ্জ। আপনার ছোট্ট পদক্ষেপগুলোই আপনার প্রিয় কিটিকে সুস্থ ও সুখী রাখতে পারে।
বিড়ালের শীতকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই গাইডের মূল পয়েন্টগুলো মেনে চলুন:
- শীতের আগে ভ্যাকসিন দিন
- গোসল বন্ধ রাখুন
- উষ্ণ বিছানা তৈরি করুন
- পুষ্টিকর খাবার দিন
- পোশাক পরান
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন
আপনার বিড়াল যদি সুস্থ ও খুশি থাকে, তাহলে বুঝবেন আপনি সঠিক পথেই আছেন। এই শীতে আপনার আদরের কিটি যেন সম্পূর্ণ নিরাপদ ও আরামদায়ক থাকে, এই কামনা রইল।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
শীতে বিড়ালকে কত ঘন ঘন গোসল করাতে হয়?
উত্তর: শীতকালে বিড়ালকে গোসল করানো থেকে বিরত থাকাই ভালো। পুরো শীতের তিন মাস (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) গোসল না করানোই উত্তম। বিড়াল নিজেই নিজেকে পরিষ্কার রাখে। প্রয়োজনে ড্রাই শ্যাম্পু বা পেট ওয়াইপস ব্যবহার করতে পারেন। একান্ত জরুরি হলে রৌদ্রজ্জ্বল দুপুরে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে সাথে সাথে ভালো করে শুকিয়ে ফেলুন।
শীতে বিড়ালের ফ্লু হলে কী করবো?
উত্তর: বিড়ালের ফ্লুর লক্ষণ দেখা দিলে (হাঁচি, নাক-চোখ দিয়ে পানি পড়া, জ্বর, খাওয়া বন্ধ) দ্রুত নিকটস্থ ভেটেরিনারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। ঘরে বসে চিকিৎসা করার চেষ্টা করবেন না। ফ্লু খুবই মারাত্মক এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে বিড়ালের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই প্রতিরোধ হিসেবে শীতের আগে অবশ্যই ফ্লু ভ্যাকসিন দিয়ে নিন।
শীতে বিড়ালকে কী ধরনের খাবার দেওয়া উচিত?
উত্তর: শীতে বিড়ালের বিপাক হার বৃদ্ধি পায়, তাই তাদের স্বাভাবিকের চেয়ে ১০-১৫% বেশি ক্যালোরি প্রয়োজন। প্রতিদিন তাজা খাবার রান্না করুন এবং কুসুম গরম খাবার পরিবেশন করুন। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (মুরগি, মাছ, ডিম) বেশি দিন। ঠাণ্ডা খাবার একেবারেই দেবেন না। ঝোল জাতীয় খাবার দিন যাতে পানির চাহিদাও পূরণ হয়। ফ্রিজে রাখা খাবার ভালো করে গরম করে ঠাণ্ডা হতে দিয়ে দিন।
বিড়ালকে কি জামা পরানো প্রয়োজন?
উত্তর: হ্যাঁ, বিশেষ করে শর্টহেয়ার বিড়াল, স্ফিংক্স জাতের বিড়াল, বা বয়স্ক বিড়ালদের জন্য শীতকালীন পোশাক খুবই উপকারী। তাপমাত্রা যখন ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামে, তখন নরম ফ্লিস বা উলের সোয়েটার পরাতে পারেন। পোশাক ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক হওয়া উচিত যাতে বিড়াল স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে। তবে সব বিড়াল পোশাক পছন্দ করে না, তাই জোর করবেন না।
শীতে বিড়ালের কোন ভ্যাকসিনগুলো জরুরি?
উত্তর: শীতের আগে বিড়ালকে অবশ্যই দুইটি ভ্যাকসিন দিন: (১) র্যাবিস ভ্যাকসিন – প্রতি বছর একবার দিতে হয়, এবং (২) ফ্লু ভ্যাকসিন (FVRCP) – যা ক্যাট ফ্লু, হার্পিসভাইরাস এবং ক্যালিসিভাইরাস থেকে রক্ষা করে। যদি আপনার বিড়াল বাইরে যায়, তাহলে লিউকেমিয়া ভ্যাকসিনও দিতে পারেন। ভ্যাকসিন না দিলে শীতে ঠাণ্ডা লেগে মারাত্মক ফ্লু হতে পারে যা জীবনঝুঁকিপূর্ণ। চিকিৎসার খরচ ভ্যাকসিনের চেয়ে অনেক বেশি পড়ে।
শীতে বিড়ালকে বাইরে যেতে দেওয়া কি নিরাপদ?
উত্তর: শীতে বিড়ালকে বাইরে যাওয়া সীমিত করা উচিত। ভোর ও রাতের বেলা একেবারেই বাইরে যেতে দেবেন না কারণ এসময় তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। দুপুরে যখন রোদ থাকে এবং তাপমাত্রা সহনীয় থাকে, তখন কিছুক্ষণের জন্য ছাড়তে পারেন। বাইরে থেকে এলে বিড়ালের পা ভালো করে মুছে দিন। বৃষ্টি বা কুয়াশার দিনে বাইরে পাঠানো থেকে বিরত থাকুন।
বিড়ালের বিছানা কীভাবে তৈরি করবো?
উত্তর: শীতে বিড়ালের জন্য আদর্শ বিছানা তৈরি করতে: মাটি/ফ্লোর থেকে অন্তত ৬ ইঞ্চি উঁচুতে রাখুন, পুরু কাপড়, কম্বল বা ফ্লিস ব্যবহার করুন, একটি বদ্ধ বা আধা-বদ্ধ জায়গা তৈরি করুন (ক্যাট বেড বা কার্ডবোর্ড বক্স), এবং যেখানে রোদ আসে এমন স্থানে রাখুন। বিড়াল দিনে ১২-১৬ ঘণ্টা ঘুমায়, তাই উষ্ণ ও আরামদায়ক বিছানা তাদের সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাচ্চা বিড়ালের শীতকালীন যত্ন কি আলাদা?
উত্তর: হ্যাঁ, বাচ্চা বিড়ালদের (kittens) অতিরিক্ত যত্ন প্রয়োজন। তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পুরোপুরি বিকশিত নয়, তাই প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি বেশি উষ্ণতা দরকার। ২-৩ ঘণ্টা পরপর খাবার দিন। মায়ের সাথে রাখলে সবচেয়ে ভালো। বাচ্চা বিড়ালকে কখনোই বাইরে যেতে দেবেন না এবং বিশেষভাবে নজরদারিতে রাখুন।
শীতকালে আপনার বিড়ালের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু – উষ্ণ বিছানা, শীতকালীন পোশাক, খাবার, খেলনা এবং আরও অনেক কিছু পাবেন MyPetHouse এ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত পেট শপ থেকে অনলাইনে অর্ডার করুন এবং ঘরে বসে পেয়ে যান আপনার প্রিয় পোষা প্রাণীর যত্নের সব উপকরণ।
